ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি - ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা কমাতে কী করবেন?
বাচ্চার জ্বর হলে করণীয়ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি এবং কীভাবে এর থেকে মুক্তি পাবেন তা জানতে আমাদের এই
পোস্টটি পড়ুন। এখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও ঘরোয়া প্রতিকারের সেরা
উপায়গুলো আলোচনা করা হয়েছে।
বারবার সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে সুস্থ থাকতে আজই বিস্তারিত জেনে নিন। ঘন ঘন
ঠান্ডা কাশি থেকে নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে এই টিপসগুলো আপনার দারুণ কাজে
আসবে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
- ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে কেন ঠান্ডা বেশি লাগে
- আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে ঠান্ডা লাগার সম্পর্ক
- শরীরে কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে
- পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কি ঠান্ডা লাগে
- অ্যালার্জির কারণে কি বারবার ঠান্ডা হতে পারে
- সাইনাস সমস্যায় ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ
- শিশু ও বয়স্কদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ
- ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা কি কোনো রোগের লক্ষণ
- ঘরোয়া উপায়ে কি ঘন ঘন ঠান্ডা কমানো যায়
- ঠান্ডা লাগলে কি অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়
- কতদিন ঠান্ডা থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
- উপসংহারঃ ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি বিষয়টি নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন উঁকি
দেয়। সাধারণত বারবার হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া কিংবা গলা ব্যথার মতো
সমস্যাগুলোকে আমরা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের
ভাষায় যদি আপনার বছরে চারবারের বেশি সাধারণ সর্দি-জ্বর হয় তবে তাকে এই তালিকায়
রাখা যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন বাইরের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সাথে
লড়াই করতে হিমশিম খায় তখন এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়। মূলত পরিবেশগত কারণ এবং
শারীরিক দুর্বলতা উভয়ই এই সমস্যার জন্য প্রধানত দায়ী হতে পারে।
মানুষের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সাধারণত নাক ও গলার উপরিভাগে প্রদাহ তৈরি
হয়। সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি কয়েক দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যাওয়ার
কথা। কিন্তু যাদের শরীরে বারবার এই উপসর্গ ফিরে আসে তারা মূলত ক্রনিক সমস্যায়
ভুগছেন। একেই সাধারণ ভাষায় ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা বলা হয়ে থাকে। আমাদের চারপাশের
ধুলোবালি বা দূষিত পরিবেশ এই সমস্যার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই সুস্থ থাকতে
সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে কেন ঠান্ডা বেশি লাগে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে শরীর খুব সহজেই বিভিন্ন
সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা সাধারণত
ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাথে সাথেই সেগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। কিন্তু এটি
দুর্বল থাকলে জীবাণুগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার সুযোগ পায় এবং আমাদের অসুস্থ করে
তোলে। ফলে একজন সুস্থ মানুষের তুলনায় দুর্বল ইমিউনিটি সম্পন্ন ব্যক্তিরা ঘন ঘন
সর্দি-কাশিতে ভুগে থাকেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এই রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর পেছনে বড় ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
যখন আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক সুরক্ষা দেয়ালটি ভেঙে যায় তখন সামান্য বায়ুবাহিত
রোগও মারাত্মক হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শ্বেত রক্তকণিকা ঠিকমতো
কাজ করতে পারে না। এর ফলে শরীরের ভেতরে থাকা অ্যান্টিবডিগুলো ভাইরাসকে ঠিকমতো
চিনতে বা ধ্বংস করতে সক্ষম হয় না। বারবার সর্দি হওয়া আসলে শরীর থেকে পাওয়া একটি
বিশেষ সংকেত। এই সংকেত আমাদের বলে দেয় যে ভেতর থেকে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে।
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে ঠান্ডা লাগার সম্পর্ক
আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে আমাদের শরীরে ঠান্ডা লাগার একটি গভীর ও সরাসরি সম্পর্ক
বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে যখন গরম থেকে হুট করে শীত আসে তখন বাতাসের আর্দ্রতা
এবং তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এই সময় বাতাসে ভাইরাসের ঘনত্ব বেড়ে যায় যা
আমাদের শ্বসনতন্ত্রকে খুব সহজে আক্রমণ করতে পারে। আমাদের শরীর হঠাৎ এই তাপমাত্রার
পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় গ্রহণ করে থাকে। এই সন্ধিক্ষণে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা শিথিল হয়ে পড়লে সর্দি-কাশির জীবাণুগুলো সহজেই শরীরের দখল
নিয়ে নেয়।
শীতের শুরুতে বাতাসের শুষ্কতা বেড়ে যায় যা আমাদের নাকের ভেতরের ঝিল্লিকে শুকিয়ে
ফেলে। এই শুষ্ক ঝিল্লি ভাইরাস রোধে আগের মতো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে না।
ফলে খুব সহজেই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে জীবাণু শরীরের ভেতরে প্রবেশ করার পথ
খুঁজে পায়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই সময় ভাইরাসগুলো অনেক বেশি সক্রিয় এবং
শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই ঋতু বদলের এই সময়ে বাড়তি সতর্কতা না নিলে সুস্থ থাকা কঠিন
হয়ে পড়ে।
শরীরে কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে
শরীরে নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবেও আপনি বারবার ঠান্ডা ও সর্দিজনিত সমস্যায়
আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা সচল রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি শরীরের শ্বেত
রক্তকণিকাকে শক্তিশালী করে যা সরাসরি জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
এছাড়া ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের কোষগুলোকে
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এই অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর ঘাটতি
থাকলে সামান্য ঋতু পরিবর্তনও আপনার জন্য বড় অসুখের কারণ হতে পারে।
ভিটামিন এ এবং ই-এর অভাবও শ্বাসনালীর আবরণী কলাকে দুর্বল করে দিতে পারে। এই আবরণ
দুর্বল হয়ে পড়লে ভাইরাস খুব দ্রুত রক্তস্রোতে মিশে যাওয়ার সুযোগ পায়। আমাদের
শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার জন্য এই মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টগুলো
অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে কাজ করে। সুষম খাবার এবং পর্যাপ্ত ফলমূল না খেলে
শরীরে এই ভিটামিনগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। নিয়মিত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে
ঠান্ডা লাগার প্রবণতা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কি ঠান্ডা লাগে
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ব্যাহত হয় যা পরোক্ষভাবে আপনাকে
ঠান্ডা লাগার দিকে ঠেলে দেয়। ঘুমের সময় আমাদের শরীর 'সাইটোকাইন' নামক এক ধরণের
প্রোটিন তৈরি করে যা সংক্রমণ রোধে কাজ করে। আপনি যদি নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা না
ঘুমান তবে এই প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শরীরের প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং খুব সাধারণ ভাইরাসও আপনাকে দ্রুত কাবু করে ফেলে। নিয়মিত
ঘুমের অভাব দীর্ঘমেয়াদে আপনার শ্বসনতন্ত্রের কার্যকারিতাকেও অনেকটা দুর্বল করে
দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ দাঁতের যন্ত্রণা কমানোর উপায়
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব শরীরকে বিশ্রামের সুযোগ দেয় না যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও কমিয়ে দিয়ে সংক্রমণের পথ সহজ
করে। যখন আমরা ঘুমাই তখন শরীর সারাদিনের ক্ষতি পূরণ করে এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়
ব্যস্ত থাকে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে এই প্রাকৃতিক মেরামত ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ অকেজো
হয়ে পড়তে শুরু করে। তাই নিয়মিত এবং গভীর ঘুম সর্দি-কাশির হাত থেকে বাঁচার একটি বড়
মহৌষধ।
অ্যালার্জির কারণে কি বারবার ঠান্ডা হতে পারে
অ্যালার্জির কারণে অনেকের বারবার ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ দেখা দেয় যা আসলে
সাধারণ সর্দি থেকে আলাদা। ধুলোবালি, পরাগ রেণু কিংবা পোষা প্রাণীর লোম থেকে
অনেকের নাকে ও গলায় অস্বস্তি তৈরি হয়। এই সংস্পর্শে এলে নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া
এবং বারবার হাঁচি হওয়ার মতো লক্ষণগুলো প্রকট হয়ে ওঠে। অনেকেই এই অ্যালার্জিক
রাইনাইটিসকে সাধারণ ঠান্ডা মনে করে ভুল চিকিৎসা করেন যা সমস্যাকে আরও
দীর্ঘস্থায়ী করে। সঠিক পরীক্ষা-পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যালার্জির উৎস চিহ্নিত করতে
পারলে এই ঘন ঘন অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় নাকের ঝিল্লিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে যা
সর্দি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এটি মূলত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অতি-সংবেদনশীল
প্রতিক্রিয়া যা ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুর বিরুদ্ধে লড়ে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে
যদি আপনার বারবার একই সমস্যা হয় তবে তা অ্যালার্জি হতে পারে। সঠিক সময়ে
অ্যান্টি-হিস্টামিন বা প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করলে এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি
পাওয়া যায়। পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই ধরণের ঠান্ডার সমস্যা থেকে সহজেই
দূরে থাকা যায়।
সাইনাস সমস্যায় ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ
সাইনাস সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নাক বন্ধ থাকা এবং কপালে ব্যথার
সাথে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার যোগসূত্র রয়েছে। সাইনাসের ছিদ্রগুলো যখন মিউকাস বা সর্দি
জমে বন্ধ হয়ে যায় তখন সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হয়। এর ফলে
সামান্য ঠান্ডা লাগলে সেটি দ্রুত সাইনাস ইনফেকশনে রূপ নেয় এবং সারতে অনেক সময়
লাগে। যারা দীর্ঘমেয়াদী সাইনোসাইটিসে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দিও অনেক
সময় তীব্র আকার ধারণ করে থাকে। সঠিক সময়ে সাইনাসের সঠিক চিকিৎসা না করালে এই
সর্দিজনিত সমস্যা সারা বছর ধরে চলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
নাকের হাড় বাঁকা থাকলে বা পলিপ থাকলে সাইনাসের নালীগুলো সংকুচিত হয়ে সর্দি জমে
থাকে। এই জমে থাকা সর্দি বারবার সংক্রমণের সৃষ্টি করে যা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার
অনুভূতি দেয়। সাইনাস ইনফেকশন হলে মাথা ব্যথার পাশাপাশি ভারী ভাব এবং ঘ্রাণশক্তি
কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে উষ্ণ গরম পানি পান করলে এই
জমাট সর্দি অনেকটা পাতলা হয়ে যায়। তবে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিশু ও বয়স্কদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ
শিশু ও বয়স্কদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার পেছনে তাদের শারীরিক গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ
ব্যবস্থার বিশেষ অবস্থা দায়ী। শিশুদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম পুরোপুরি বিকশিত না
হওয়ায় তারা খুব সহজেই স্কুলের পরিবেশে অন্য শিশুদের থেকে সংক্রমিত হয়। অন্যদিকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই
কিছুটা দুর্বল হতে শুরু করে। এর ফলে বয়স্কদের শরীরে কোনো সংক্রমণ হলে সেটি খুব
দ্রুত ফুসফুস বা শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এই দুই বয়সের মানুষের
ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের বিষয়ে বাড়তি
সতর্কতা প্রয়োজন।
শিশুরা খেলাধুলা করার সময় প্রায়ই হাত দিয়ে মুখ বা নাক স্পর্শ করে যা জীবাণু ছড়াতে
সাহায্য করে। তাদের হাইজিন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় তারা খুব দ্রুত সাধারণ
সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আবার বয়স্কদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী
রোগ থাকলে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। বাড়ির ছোট শিশু এবং বৃদ্ধ সদস্যদের
প্রতি ঋতু পরিবর্তনের সময় বাড়তি যত্ন নেওয়া আবশ্যক। নিয়মিত হাত ধোয়া এবং মাস্ক
ব্যবহারের অভ্যাস তাদের এই সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে।
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা কি কোনো রোগের লক্ষণ
ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এটি অনেক সময় শরীরের
অন্তর্নিহিত কোনো রোগের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনার সর্দি-কাশি
দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে তা রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে
দেওয়া যায় না। এছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রিত হয় না এবং বারবার ঠান্ডা লাগার প্রবণতা দেখা দেয়। যখন কোনো রোগ শরীরের
জীবনীশক্তি কমিয়ে দেয় তখন সাধারণ ভাইরাসগুলোও আমাদের খুব সহজে আক্রমণ করে অসুস্থ
করে ফেলে। তাই বারবার ঠান্ডা লাগলে একে অবহেলা না করে শরীরের অন্য কোনো জটিলতা
আছে কি না তা যাচাই করা জরুরি।
ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগও অনেক সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ঘন ঘন
ঠান্ডা লাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শরীরের সুগার লেভেল ঠিক না থাকলে অভ্যন্তরীণ
অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া অটোইমিউন ডিজিজ থাকলেও শরীর নিজের কোষকেই শত্রু ভেবে আক্রমণ করে এবং
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে ফেলে। বারবার সর্দি হওয়া আসলে শরীরের একটি
সতর্কবার্তা যা নির্দেশ করে যে ভেতর থেকে কোনো সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছে না।
সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে পারলে এই ধরণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব
হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে কি ঘন ঘন ঠান্ডা কমানো যায়
ঘরোয়া উপায়ে খুব সহজেই ঠান্ডা লাগার তীব্রতা এবং এর পুনরাবৃত্তি অনেকাংশে কমিয়ে
আনা সম্ভব। আদা ও মধুর মিশ্রণ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে যা প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিয়মিত কুসুম গরম পানি পান করলে
শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া তুলসী
পাতার রস বা গরম চায়ের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীরে প্রয়োজনীয়
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পৌঁছায়। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ছাড়াই শরীরের ভেতর থেকে লড়াই করার শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে সামান্য হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে পান করা
যেতে পারে। হলুদের কারকিউমিন উপাদানটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জাদুর
মতো কাজ করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়া নিয়মিত লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার
সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেক শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে রসুন ও
কালোজিরা রাখলে তা শরীরের জন্য প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। ঘরোয়া এই
অভ্যাসগুলো নিয়ম মেনে চললে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কষ্ট থেকে অনেকটা নিস্তার পাওয়া
যায়।
ঠান্ডা লাগলে কি অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়
সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-জ্বর সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে যার ওপর
অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না। অ্যান্টিবায়োটিক মূলত ব্যাকটেরিয়া জনিত
সংক্রমণ ধ্বংস করার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অকেজো।
অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায় এবং
শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অনেকেই না বুঝে সর্দি হলেই
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরণের কড়া ওষুধ গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য
দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যদি ঠান্ডার কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়া জনিত জটিলতা
দেখা দেয় কেবল তখনই এর প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত
হন যে সংক্রমণটি ভাইরাসের নাকি ব্যাকটেরিয়ার এবং সেই অনুযায়ী ওষুধের ডোজ নির্ধারণ
করেন। ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে শরীরে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়
যার ফলে পরবর্তীতে বড় কোনো অসুখে সাধারণ ওষুধ কাজ করে না। তাই সর্দি-কাশিতে
পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং প্রচুর তরল খাবার গ্রহণ করাই হলো প্রাথমিক ও সবচেয়ে সঠিক
চিকিৎসা। শরীরকে সময় দিলে তা নিজেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুস্থ হয়ে ওঠার
ক্ষমতা রাখে।
কতদিন ঠান্ডা থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
সাধারণত সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দি সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে পুরোপুরি সেরে যাওয়ার
কথা। কিন্তু যদি আপনার এই অসুস্থতা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে তবে
অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। দীর্ঘস্থায়ী সর্দি অনেক সময়
সাইনোসাইটিস বা ফুসফুসে সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয় যা অবহেলা করলে বড় সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া যদি ঠান্ডার সাথে তীব্র জ্বর থাকে এবং তা তিন দিনের বেশি সময় স্থায়ী হয় তবে
দেরি করা ঠিক হবে না। শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরে না আসলে দ্রুত পেশাদার
চিকিৎসা গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
যদি সর্দির পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা কিংবা কফ দিয়ে রক্ত পড়ার মতো লক্ষণ
দেখা দেয় তবে তা জরুরি অবস্থার সংকেত। শিশুদের ক্ষেত্রে যদি কান ব্যথা করে বা
খেতে অনীহা তৈরি হয় তবে সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক। বয়স্কদের
ক্ষেত্রে ঠান্ডার কারণে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে বা খুব বেশি দুর্বলতা অনুভব করলে
ঘরোয়া চিকিৎসার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে জটিলতা
এড়ানো যায় এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয়। আপনার শরীরের যে কোনো অস্বাভাবিক
পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা স্বাস্থ্যের দীর্ঘায়ুর জন্য অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়।
উপসংহারঃ ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যেমে জানতে পারলাম যে, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি
এবং ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা কেবল একটি সাধারণ সমস্যা নয় বরং শরীরের দুর্বল রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
এবং পরিবেশগত পরিবর্তন এই সমস্যার মূলে কাজ করে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে
ব্যাহত করতে পারে। নিয়মিত ঘুম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে
আমরা আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারি। এছাড়া অ্যালার্জি
বা সাইনাসের মতো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সঠিক ব্যবস্থা নিলে বারবার অসুস্থ
হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মূলত সচেতনতা এবং সময়োপযোগী চিকিৎসাই পারে
আমাদের এই দীর্ঘস্থায়ী সর্দি-কাশির অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে একটি সুস্থ জীবন
উপহার দিতে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার এই চক্রটি ভাঙতে হলে আমাদের
প্রতি দিনের অভ্যাসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি। সামান্য সর্দি হলেই
ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেওয়া
এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঋতু
পরিবর্তনের সময়ে বাড়তি সতর্কতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা একটি
অপরিহার্য দায়িত্ব। শরীর যখন বারবার অসুস্থ হওয়ার সংকেত দেয়, তখন তাকে অবহেলা
না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।



সার্ভিস আইটির নিয়ম মেনে কমেন্ট করুন প্রত্যেকটা কমেন্টের রিভিউ করা হয়।
comment url