সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা কত টাকা

বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়সিঙ্গাপুরে চাকরির স্বপ্ন দেখছেন কিন্তু ভিসার খরচ জানেন না? এই পোস্টে আমরা আজকে আপনাকে জানাব, সিঙ্গাপুর কাজের ভিসার সব খরচ, প্রসেসিং ধাপ, দরকারি কাগজপত্র ও বাস্তব বেতন।
সিঙ্গাপুর-কাজের-ভিসা-কত-টাকা
বাংলাদেশিদের জন্য কোন ভিসা সেরা, দালাল ছাড়া কীভাবে যাওয়া যায়, কোন কাজে বেতন কত — সব কিছু একসাথে। চলুন জানা যাক বিস্তারিত, হিসাবসহ।

পেজ সূচীপত্রঃ সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা কত টাকা

সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা 

সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা মানে হলো সরকার থেকে দেওয়া এমন এক অনুমতি, যার মাধ্যমে আপনি সেখানে বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। এই ভিসা ছাড়া কেউ কাজ করলে সেটা অবৈধ ধরা হয়, আর ধরা পড়লে জেল বা দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ভিসা সাধারণত তিন ধরনের আর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে প্রচলিত হলো Work Permit ভিসা, কারণ এটা কম যোগ্যতা সম্পন্ন কাজের জন্য। এটার মাধ্যমেই হাজার হাজার বাংলাদেশি এখন সিঙ্গাপুরে কাজ করছে।

দ্বিতীয় ভিসা হলো S Pass, যেটা টেকনিক্যাল স্কিল থাকা লোকদের জন্য দেওয়া হয়। এই ভিসায় মেশিন অপারেটর, টেকনিশিয়ান বা সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করা যায়। তৃতীয়টা যেটা প্রফেশনাল বা অফিসার লেভেলের জন্য। এই ভিসায় যেতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা আর ভালো বেতনের প্রমাণ লাগবে। তবে সাধারণভাবে বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ লোকই Work Permit নিয়েই যায়।

কেন সিঙ্গাপুরে কাজের চাহিদা বাড়ছে?

সিঙ্গাপুর একদমই শ্রমনির্ভর দেশ, তাই ওখানে শ্রমিকের দরকার সব সময় থাকে। নির্মাণ, ক্লিনিং রেস্টুরেন্ট, আর ফ্যাক্টরি সেক্টরে প্রতিনিয়ত নতুন লোক দরকার হয়। বাংলাদেশি শ্রমিকরা এখন ওদের কাছে বেশি জনপ্রিয় কারণ আমরা পরিশ্রমী আর খরচ কম। এই কারণে সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকেই বেশি লোক নিচ্ছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে শ্রম চুক্তি থাকায় এখন যাওয়াটা আরও সহজ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সরকারও এখন সরকারি চ্যানেলে লোক পাঠাচ্ছে, যাতে প্রতারণা না হয়। BOESL আর BMET-এর মতো অফিসিয়াল সংস্থাগুলো সরাসরি সিঙ্গাপুরের কোম্পানির সাথে কাজ করে। এই কারণে আগের মতো দালালের ঝামেলাও কমেছে অনেকটা। সরকার চাইছে বৈধ পথে শ্রমিক পাঠিয়ে দেশের রেমিট্যান্স বাড়াতে। তাই এখন নিরাপদভাবে সিঙ্গাপুরে কাজের সুযোগ আগের চেয়ে অনেক বেশি।

সিঙ্গাপুর কাজের ভিসার ধরন ও পার্থক্য

Work Permit মূলত সাধারণ শ্রমিকদের জন্য, যেমন ফ্যাক্টরি, নির্মাণ বা সার্ভিস কাজ। এই ভিসায় যাওয়া সহজ, খরচও তুলনামূলক কম। তবে এখানে কাজের সময়সীমা আর চাকরির ধরন নির্দিষ্ট থাকে কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। S Pass একটু উন্নত লেভেলের, যেখানে বেতন আর সুযোগ-সুবিধা বেশি। সবচেয়ে উচ্চ লেভেলের ভিসা, যা সাধারণত অফিস বা ম্যানেজমেন্টে কাজের জন্য।

Work Permit ভিসা সাধারণত দুই বছর মেয়াদি হয়, পরে নবায়ন করা যায়। S Pass বা  সাধারণত তিন বছরের জন্য দেওয়া হয়। এই ভিসায় কাজের সুযোগ, পরিবার নিয়ে থাকা, এমনকি স্থায়ী হওয়ার সুযোগও থাকে। তবে এগুলোর আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল এবং খরচও বেশি। তাই প্রথমবারের আবেদনকারীদের জন্য Work Permit-ই সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প।

সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা পেতে মোট কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর কাজের ভিসা পেতে সাধারণত এক লক্ষ পঞ্চাশ থেকে তিন লাখ টাকার মতো লাগে। এর মধ্যে মেডিকেল, পাসপোর্ট, প্রশিক্ষণ, এজেন্সি ফি আর বিমান ভাড়া সবই অন্তর্ভুক্ত। তবে সরকারি চ্যানেলে গেলে এই খরচ অনেক কমে আসে, প্রায় ১ লাখ টাকার মতো। বেসরকারি দালাল ধরলে খরচ অনেক সময় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই কাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন সেটা আগে যাচাই করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সিঙ্গাপুর-কাজের-ভিসা-কত-টাকা
কিছু এজেন্সি “নিশ্চিত ভিসা” বলে বেশি টাকা নেয়, এটা একদমই বিশ্বাস করবেন না। ভিসা কখনোই কেউ গ্যারান্টি দিতে পারে না, কারণ সিদ্ধান্ত দেয় সিঙ্গাপুরের এম্বাসি। এছাড়া অনেক সময় এজেন্সি ফ্লাইট টিকেট বা মেডিকেল নিয়ে আলাদা চার্জ নেয়। তাই পুরো খরচের লিস্ট আগেই লিখিতভাবে জেনে নিন। অন্যথায় শেষে গিয়ে ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

সরকারি বনাম দালাল মাধ্যমে ভিসা নেওয়ার পার্থক্য

সরকারি ভাবে গেলে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছভাবে হয়, প্রতারণার সুযোগ কম। BOESL বা BMET অফিস থেকে কাগজপত্র যাচাই করা যায় অনলাইনে। এখানে নির্দিষ্ট ফি নেওয়া হয়, আর সব টাকা রসিদসহ দেওয়া হয়। সময় কিছুটা বেশি লাগে ঠিকই, কিন্তু নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত থাকে। এই পথেই গেলে ভিসার সুযোগ বাড়ে এবং টাকাও কম খরচ হয়।

অন্যদিকে দালালের মাধ্যমে গেলে ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেকে মুখের কথায় টাকা নিয়ে পরে উধাও হয়ে যায়। ভিসা না পেয়ে টাকা হারিয়ে অনেকে ঋণের জালে পড়ে। তাছাড়া অনেকেই ভুয়া কোম্পানির নাম দিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখায়। তাই দালালের শর্টকাট বাদ দিয়ে সরকারি পথ ধরাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

ভিসা প্রসেসিং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

প্রথমে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি থেকে Offer Letter পেতে হয়। তারপর মেডিকেল টেস্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আর BMET রেজিস্ট্রেশন করা লাগে। সব কাগজ ইংরেজিতে অনুবাদ করা থাকলে প্রসেসিং সহজ হয়।এরপর ভিসা অনুমোদনের জন্য কোম্পানি সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে আবেদন করে। সব ঠিক থাকলে ভিসা ইস্যু হয়, তারপর টিকেট নিয়ে যাত্রা করা যায়। প্রয়োজনীয় কাগজগুলোর মধ্যে আছে বৈধ পাসপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট, ছবি, প্রশিক্ষণ সনদ।

পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস থাকতে হবে। কোনো ভুল বানান থাকলে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে। কাগজে সামান্য ভুল থাকলেও ভিসা আটকে যেতে পারে। তাই সবকিছু ভালোভাবে যাচাই করেই আবেদন করা উচিত।

সিঙ্গাপুরে কোন কাজের বেতন কত তার আনুমানিক হিসাব

নির্মাণ সেক্টরে কাজ করা শ্রমিকরা মাসে গড়ে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পায়। রেস্টুরেন্ট বা ক্লিনিং সেক্টরে বেতন কিছুটা কম, প্রায় ৬০–৮০ হাজার টাকা। যদি কেউ টেকনিক্যাল পোস্টে থাকে, যেমন ইলেকট্রিশিয়ান বা অপারেটর, আয় হয় আরও বেশি। S Pass ধারীরা মাসে ১–২ লাখ টাকাও আয় করতে পারে। তাছাড়া ওভারটাইম আর বোনাস থাকলে আয় আরও বেড়ে যায়।
সিঙ্গাপুর-কাজের-ভিসা-কত-টাকা
সিঙ্গাপুরে কাজের সময় সাধারণত ৮ ঘণ্টা, তবে ওভারটাইম প্রচলিত। অনেক কোম্পানি সপ্তাহে ছুটি দেয় না, তাই কাজ বেশি করলে আয়ও বাড়ে। তবে কাজের ধরন অনুযায়ী চাপও অনেক বেশি থাকে।শ্রমিকদের জন্য নিয়মিত মেডিকেল আর ইনস্যুরেন্স দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই সেখানে কাজ করলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা দুটোই পাওয়া যায়।

সিঙ্গাপুরে জীবনযাপনের খরচ ও সঞ্চয়ের হিসাব

সিঙ্গাপুরে জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি, এটা সত্যি। তবে অনেক কোম্পানি থাকার জায়গা ও খাবার দেয়, এতে খরচ বাঁচে। যাদের কোম্পানি দেয় না, তাদের মাসে ২৫–৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বাকি টাকা সঞ্চয় হিসেবে দেশে পাঠানো যায়, যা ৩০–৫০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এক বছরে গড়ে প্রায় ৪–৫ লাখ টাকা সেভ করা সম্ভব।


সিঙ্গাপুরে ট্যাক্স সিস্টেম খুবই পরিষ্কার, তাই বেতনেও কাটতি কম। অফিসিয়াল চাকরিতে ইনস্যুরেন্স ও মেডিকেল সুবিধা দেওয়া হয়। তবে আইন ভাঙলে বা অনুমতি ছাড়া কাজ করলে জরিমানা অনেক বড়।তাই সবসময় কোম্পানির নিয়ম মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। এভাবেই সিঙ্গাপুরে থেকে নিরাপদে আয় করা যায় দীর্ঘ সময়।

ভিসা প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

সবচেয়ে আগে যাচাই করুন কোম্পানি আসল কিনা, BMET ওয়েবসাইটে খুঁজে দেখুন। যে এজেন্সি টাকার কথা বলছে, তাদের লাইসেন্স নম্বর যাচাই করুন। ফেসবুক বা অনলাইনের বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হবেন না। রসিদ ছাড়া কখনোই টাকা দিবেন না, সব লিখিতভাবে রাখুন। একটা ভুলেই কিন্তু পুরো টাকা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়।

যদি কেউ “দ্রুত ভিসা” বা “গ্যারান্টি ভিসা” বলে, বুঝবেন প্রতারণা আছে। সিঙ্গাপুর এম্বাসি ছাড়া কেউ ভিসা দিতে পারে না। তাই সব কাগজ অফিসিয়ালি যাচাই না করে কাউকে বিশ্বাস করা ভুল। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা। এতে নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা আর স্বস্তি—সব একসাথে পাওয়া যায়।

উপসংহার: সঠিক পথে গেলে সিঙ্গাপুরে কাজ হবে ভবিষ্যতের বিনিয়োগ

সিঙ্গাপুরে কাজ করা শুধু চাকরি না, এটা জীবনের একটা বড় সুযোগ। দালালের শর্টকাট পথে না গিয়ে নিয়ম মেনে গেলে সফলতা নিশ্চিত। সরকারি চ্যানেল ধরলে টাকাও বাঁচে, ঝুঁকিও কমে যায় অনেক।নিজের স্কিল বাড়ান, কাগজপত্র ঠিক রাখুন, আর ধৈর্য ধরুন। তাহলেই সিঙ্গাপুরে কাজ হবে ভবিষ্যতের নিরাপদ বিনিয়োগ। অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ভুল পথে গিয়ে সব হারিয়ে ফেলে, এটা করবেন না।

সব কিছু যাচাই করে, অফিসিয়াল নিয়ম মেনে চলাই স্মার্ট সিদ্ধান্ত। সঠিক কোম্পানি বেছে নিতে পারলে আয় ও ভালো হবে, জীবনও সহজ হবে। তাই সময় নিয়ে প্ল্যান করুন, তথ্য যাচাই করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। সিঙ্গাপুরে কাজের স্বপ্ন তখনই সফল হবে, যখন আপনার যাওয়ার পথটা হবে সঠিক। আশা করি এই পোস্টা পরে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য সঠিক ধরনা পেয়েছেন, এর পরও যাদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সার্ভিস আইটির নিয়ম মেনে কমেন্ট করুন প্রত্যেকটা কমেন্টের রিভিউ করা হয়।

comment url

Md. Sanjid Ali
Md. Sanjid Ali
সার্ভিস আইটি-তে আপনাকে স্বাগতম। আধুনিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞান নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি। এখানে আপনি অনলাইন ইনকামের নানা কৌশল, স্বাস্থ্য,চিকিৎসা, রুপচর্চা বর্তমান লাইফস্টাইল সম্পর্কিত টিপস, এবং প্রযুক্তি ও ব্লগিং-এর অজানা দিকগুলো জানতে পারবেন।।