বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়।

দুবাই যেতে কত টাকা লাগে। ভ্রমণ ভিসার দাম কত? 
 ভ্রমণ পছন্দকারী বাঙালির কাছে এখন বিদেশ ভ্রমণ আর কোনো বিলাসী স্বপ্ন নয়, বরং হাতের মুঠোয় আসা এক বাস্তবতা। কিন্তু খরচের চিন্তা আসতেই অনেকের মন খারাপ হয়ে যায়। বিদেশ ভ্রমণ মানেই কি লাখ টাকার বাজেট? একদমই না! সঠিক পরিকল্পনা, কিছু কৌশল এবং কম খরচে ঘোরার মতো গন্তব্য জানা থাকলে আপনার স্বপ্ন সত্যি হতে পারে খুব সহজেই। আসুন জেনে নেই কি ভাবে কম খরচে কোন কোন দেশ যাওয়া যায়।

পেজ সূচীপত্রঃ বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়।

কম খরচে ভ্রমণের সেরা গন্তব্য

কম খরচে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক নৈকট্য, ভিসার সুবিধা এবং স্থানীয় জীবনযাত্রার ব্যয় – এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই কারণে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ আমাদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। 

 কম খরচে নেপাল ভ্রমণ

নেপালকে বলা হয় বাজেট ট্রাভেলারদের স্বর্গ। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর দূরত্ব কম হওয়ায় বিমান ভাড়াও তুলনামূলক সাশ্রয়ী হয়, বিশেষ করে যদি আগে থেকে বুকিং করা হয়।

ভিসা সুবিধা: বাংলাদেশিদের জন্য  ভিসা ফ্রি  বিমানবন্দরে পৌঁছেই ভিসা নেওয়ার সুবিধা থাকায় ভিসার খরচ ও ঝক্কি দুটোই কমে যায়।

কেন সাশ্রয়ী? নেপালে থাকার এবং খাওয়ার খরচ অত্যন্ত কম। বিশেষ করে কাঠমান্ডু ও পোখারার বাইরে গেলে স্থানীয় গেস্ট হাউসে নামমাত্র ভাড়ায় থাকা যায়। এখানকার স্থানীয় খাবারও বেশ সস্তা ও মুখরোচক।

প্রধান আকর্ষণ:

কাঠমান্ডু: ঐতিহাসিক দরবার স্কোয়ার, পশুপতিনাথ মন্দির।

পোখারা: ফেওয়া লেক, সারাংকোট (সূর্যোদয়), এবং অন্নপূর্ণা রেঞ্জের ট্রেকিং।
বাজেট টিপ: ছোট গ্রুপে গেলে থাকার খরচ ভাগ করে নেওয়া যায়। ভ্রমণের জন্য ট্যাক্সির বদলে স্থানীয় বাস ব্যবহার করলে খরচ অনেক কমবে।

কম খরচে ভারত ভ্রমণ

আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সব দিক থেকেই বাজেট-বান্ধব ভ্রমণের এক আদর্শ গন্তব্য। সড়কপথ, রেলপথ এবং আকাশপথ—তিনটি পথেই সহজে যাতায়াত করা যায় বলে খরচ কমানোর সুযোগ থাকে প্রচুর।

ভিসা সুবিধা: ই-ভিসা বা সাধারণ ট্যুরিস্ট ভিসা তুলনামূলক কম খরচে পাওয়া যায় (ভিসা ফি প্রায় ৮০০ টাকা)।

কেন সাশ্রয়ী? কলকাতা বা উত্তর-পূর্ব ভারতে (শিলং, মেঘালয়) সড়কপথে বাস বা ট্রেনে যাওয়া সম্ভব, যা প্লেন ভাড়ার চেয়ে অনেক কম। ভারতে গণপরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ও সস্তা। স্থানীয় 'ধাবা' বা ছোট রেস্টুরেন্টগুলোতে কম খরচে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।

প্রধান আকর্ষণঃ

কলকাতাঃ ঐতিহাসিক স্থান, সস্তা কেনাকাটা, স্থানীয় খাদ্য।

শিলং ও মেঘালয়ঃ সবুজ পাহাড়, ঝরনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

দার্জিলিংঃ কম খরচে পাহাড়ি অভিজ্ঞতা।

বাজেট টিপঃ ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বা ট্রেনে কলকাতা গিয়ে, সেখান থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া সবচেয়ে সাশ্রয়ী। আগে থেকে ট্রেন বা বাসের টিকেট বুক করলে খরচ আরও কমে।

    কম খরচে ভুটান ভ্রমণ

    ‘সুখী মানুষের দেশ’ ভুটান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক শান্তিদায়ক গন্তব্য। আগে বিদেশি পর্যটকদের জন্য উচ্চ “টেকশই উন্নয়ন ফি” থাকলেও বাংলাদেশিদের জন্য এর হার কম, যা ভুটানকে বাজেট-বান্ধব করে তুলেছে।ভিসা সুবিধা: বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ফ্রি, তবে প্রবেশ পারমিট নিতে হয়।

    কেন সাশ্রয়ী? ভুটানে স্থানীয়ভাবে খরচ খুব বেশি নয়। বিশেষ করে পারো, থিম্পু এবং ফুন্টশোলিংয়ের স্থানীয় বাজারে থাকা ও খাওয়ার খরচ নাগালের মধ্যে রাখা যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোনো প্রবেশ ফি লাগে না।

    আরো পড়ুনঃ মোবাইলে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম।

    প্রধান আকর্ষণঃ পারো তাকশাং মনাস্ট্রি (টাইগার্স নেস্ট), থিম্পু, প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ।
    বাজেট টিপঃ ভ্রমণ খরচ কমানোর জন্য স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে ছোট গেস্ট হাউসে থাকার চেষ্টা করুন।

      কম খরচে থাইল্যান্ড ভ্রমণ

      থাইল্যান্ড বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, কিন্তু এটি এমন একটি দেশ যেখানে বিলাসবহুলভাবেও থাকা যায় আবার ব্যাকপ্যাকার স্টাইলেও খুব কম খরচে ঘোরা সম্ভব।

      ভিসা সুবিধা: নিয়মিত ভিসা বা মাঝেমধ্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ থাকে, তবে আগে থেকে ভিসা করাই ভালো।

      কেন সাশ্রয়ী? ঢাকা থেকে ব্যাংককের ফ্লাইট ভাড়া অন্যান্য দূরবর্তী দেশের তুলনায় তুলনামূলক কম। ব্যাংকক ও চিয়াং মাই-এর মতো শহরগুলোতে হোস্টেল বা গেস্ট হাউসের ভাড়া খুব কম। 

      স্ট্রিট ফুড বিশ্বের অন্যতম সেরা এবং অবিশ্বাস্য সস্তা।

      প্রধান আকর্ষণ: ব্যাংককের মন্দির ও বাজার, ফুকেটের সৈকত, চিয়াং মাই-এর পাহাড়ি সৌন্দর্য।

      বাজেট টিপ: বিলাসবহুল রিসোর্ট বাদ দিয়ে স্থানীয় হোস্টেল ব্যবহার করুন। ট্রান্সপোর্টের জন্য ট্যাক্সির বদলে স্থানীয় বাস, স্কাইট্রেন বা ওয়াটার ট্যাক্সি ব্যবহার করুন।

      কম খরচে ভিয়েতনাম ভ্রমণ

      সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ট্রাভেলারদের কাছে ভিয়েতনাম অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই দেশটি কম খরচে দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়।

      ভিসা সুবিধা: ই-ভিসার মাধ্যমে সহজে আবেদন করা যায়।

      কেন সাশ্রয়ী? ভিয়েতনামের স্থানীয় কারেন্সির মান বাংলাদেশি টাকার তুলনায় কম। বাসস্থান, খাবার এবং অভ্যন্তরীণ যাতায়াত খরচ অত্যন্ত সাশ্রয়ী।

      প্রধান আকর্ষণ: হ্যানয়, হো চি মিন সিটি, হা লং বে।

      বাজেট টিপ: দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণের জন্য রাতের ট্রেন বা স্লিপার বাস ব্যবহার করুন, এতে থাকার খরচও বেঁচে যায়। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সঠিক গন্তব্য বাছাইয়ের পাশাপাশি কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।

      সময়মতো বুকিং: ফ্লাইট ও হোটেল

      ফ্লাইট: ভ্রমণের কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে ফ্লাইট বুক করুন। বিভিন্ন এয়ারলাইনস যেমন এয়ার এশিয়া, ইউএস-বাংলা, বিমান বাংলাদেশ বা নভোএয়ারের অফারগুলোর দিকে নজর রাখুন। অফ-পিক সিজনে (যে সময়ে সাধারণত পর্যটকদের ভিড় কম থাকে) ভ্রমণ করলে বিমান ভাড়া এবং হোটেলের খরচ দুটোই কমে আসে।

      আবাসন: বিলাসবহুল হোটেল এড়িয়ে চলুন। হোস্টেল, ব্যবহার করলে খরচ অনেক কম হবে। ভ্রমণের কেন্দ্রস্থল থেকে একটু দূরে থাকার জায়গা নিলে খরচ আরও সাশ্রয়ী হয়।

       স্মার্ট ট্রানজিট ও স্থানীয় খাবার

      গণপরিবহন ব্যবহার: যে কোনো দেশের ভ্রমণের সময় ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে স্থানীয় বাস, ট্রেন, মেট্রো বা ট্রাম ব্যবহার করুন। এতে আপনার পরিবহন খরচ অর্ধেক বা তারও কমে আসবে।

      স্ট্রিট ফুড: দামি রেস্টুরেন্টে না খেয়ে স্থানীয় স্ট্রিট ফুড বা ছোট রেস্টুরেন্টে খান। এটি কেবল সাশ্রয়ী নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও খাবারের স্বাদ নেওয়ারও সেরা উপায়।

        সঠিক বাজেট পরিকল্পনা ও ভিসা খরচ নিয়ন্ত্রণ

        ভিজিট-মুক্ত গন্তব্য: নেপাল বা ভুটানের মতো ভিসা-মুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা আছে এমন দেশগুলো বেছে নিন। এতে ভিসার ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় দুটোই বেঁচে যাবে।

        কার্ড ও স্থানীয় মুদ্রা: আপনার ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে বিদেশ ব্যবহারের সুবিধাগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। চেষ্টা করুন সঠিক সময় ও সঠিক এক্সচেঞ্জ রেটে স্থানীয় মুদ্রা পরিবর্তন করতে। বড় অঙ্কের টাকা একবারে পরিবর্তন না করে প্রয়োজন অনুযায়ী করুন।

        উপসংহারঃ বাংলাদেশ থেকে কম খরচে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়।

        বিদেশ ভ্রমণের খরচ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব অনেকেরই থাকে। কিন্তু এই ব্লগ পোস্টটি পড়ার পর আশা করি আপনার ধারণা পাল্টে যাবে। ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো আপনার স্বপ্নের ভ্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে, আর তা আপনার সাধ্যের মধ্যেই।

        আমি মনেকরি, বাজেট ট্রাভেল মানে অভিজ্ঞতার সাথে আপস করা নয়, বরং স্মার্টলি ভ্রমণ করা। সঠিক পরিকল্পনা, একটু গবেষণা এবং কম খরচের কৌশলগুলো কাজে লাগালে আপনিও আপনার কাঙ্ক্ষিত দেশটি ঘুরে আসতে পারবেন। আশা করি বুঝতে  পেরেছেন, বাংলাদেশে থেকে কম খরচে কোন কোন দেশ ভ্রমণ করা যায়।

        এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

        পরবর্তী পোস্ট দেখুন
        এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
        মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

        সার্ভিস আইটির নিয়ম মেনে কমেন্ট করুন প্রত্যেকটা কমেন্টের রিভিউ করা হয়।

        comment url